হেলাল উদ্দীন (মিঞাজী) নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই উপজেলার দীর্ঘ ৬২ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে সম্প্রতি নেমে এসেছে এক ভিন্ন দৃশ্যপট। চারদিকে শোনা যাচ্ছে সান নিরবতা-অর্থাৎ সীমান্তে রাতের অন্ধকারে যে গুলির শব্দ কিংবা চোরাচালানকারীদের আনাগোনার দৃশ্য শোনা যেত, সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে। বিজিবি কর্তৃক জোরদার টহল এবং নজরদারির কারণে সীমান্ত এখন চোরাকারবারীদের আতঙ্কের এলাকায় রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত ঘেঁষা বিভিন্ন সীমান্তপথ দীর্ঘদিন ধরে মাদক, চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। প্রতিনিয়ত সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, স্বর্ণ, এমনকি অস্ত্রও পাচারের চেষ্টা হতো। রাত হলেই সীমান্তে মাদক কারবারীদের সক্রিয়তা বেড়ে যেত। এতে স্থানীয় মানুষজনের মাঝে ছিল ভীতি আর অনিশ্চয়তা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে চোরাকারবারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
বিজিবির সীমান্ত টহল এখন আরও বেশি সক্রিয় করা হয়েছে। সীমান্ত ঘেঁষা বিভিন্ন স্থানে বাড়ানো হয়েছে কড়া নজরদারি। আধুনিক প্রযুক্তি, ড্রোন নজরদারি, স্পেশাল টহল দল, এবং নিয়মিত রাত্রীকালীন চেকপোস্টের কারণে সীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম কার্যত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিজিবি জানায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষায় কোনরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দারা জানান, আগে রাত হলেই গুলির শব্দ আর মাদক কারবারীদের দৌরাত্ম্যে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করত। এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বিজিবির উপস্থিতি দেখে চোরাকারবারীরা সীমান্তপথ এড়িয়ে চলছে। ফলে সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন। যদিও সীমান্তে সান নিরবতা বিরাজ করছে, তবে মাদক চোরাচালানকারীদের ষড়যন্ত্র পুরোপুরি থেমে যায়নি। সীমান্তের ভেতরে ও বাইরে সক্রিয় সিন্ডিকেট এখনও সুযোগের অপেক্ষায় আছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, সীমান্তে বিজিবির উপস্থিতি অব্যাহত থাকলে চোরাকারবারীরা পুরোপুরি দমন হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানায়, সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে বিজিবি, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করছে। দীর্ঘ ৬২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় এখন যে নীরবতা নেমেছে, সেটি টেকসই করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। নাইক্ষ্যংছড়ির দীর্ঘ সীমান্ত এখন বিজিবির কঠোর টহলে নিরাপদ। চোরাচালানকারীরা আতঙ্কে এলাকা এড়িয়ে চললেও মাদক সিন্ডিকেটের হুমকি রয়ে গেছে। স্থানীয়রা চাই, এই অবস্থান যেন স্থায়ী হয়।
এ বিষয়ে ৩৪ বিজিবি সিও লেঃ কর্ণেল এস এম খায়রুল আলম, পিএসসি। বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মাদক ও চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বিজিবি সবসময় তৎপর। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়েই আমরা এ সীমান্তকে নিরাপদ রাখব।